Bangla
2 days ago

জিডিপির ৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থায়ন বাজেটে বরাদ্দ করার আহ্বান

Published :

Updated :

জলবায়ু খাতে বাজেট বরাদ্দ পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত নয়। দুর্বল ও অপর্যাপ্ত উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে উপকূল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি, উপকূলবাসীর দাবি সর্বদাই উপেক্ষিত হয়েছে। জাতীয় বাজেটে জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, ৪ কোটি উপকূলীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার টেকসই সুরক্ষায় খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য টেকসই পুনর্বাসন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন যেমন- সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণ, স্যানিটেশন, কৃষি এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হবে।

আজ ঢাকার তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবিডি আয়োজিত “জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬; জলবায়ু বাজেট ও বাংলাদেশ উপকূল” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটির সহ-আয়োজক সংস্থাগুলো হলো কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিপিআরডি, সিডিপি, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, বিসিজেএফ, উদয়ন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ও এসডিআই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারার সভাপতিত্বে এবং কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক জনাব জাবেদ রাসিন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র জনাব উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি জনাব কাউসার রহমান, পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সম্পাদক জনাব মো: মোতাহার হোসেন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ রফিকুল আলম, সিডিপি-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, এসডিআই-এর সহকারী পরিচালক জনাব আশরাফ হোসেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব আমিনুর রসুল বাবুল, বিএনএনআরসি-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব এএইচএম বজলুর রহমানসহ অন্যান্যরা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম. এ. হাসান।

জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী জলবায়ু বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না, আমরা এখনো জিডিপির মাত্র ০.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দিচ্ছি, যেখানে প্রয়োজন ন্যূনতম ৩ শতাংশ। জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। উপকূল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে জলবায়ু সহিষ্ণু পানি শোধনাগার স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি পর্যাপ্ত গবেষণা, সক্ষমতা উন্নয়ন ও সমন্বিত উদ্যোগের উপর গুরুত্ব দেন।

জনাব এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এত বছর বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু উপকূলবাসীর সুরক্ষার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। তিনি বলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোকে যুক্ত করতে হবে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে এবং নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করেই আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র জনাব উমামা ফাতেমা তার বক্তব্যে বিগত সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পরিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, প্রথমেই আমাদেরকে রামপাল, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় যত্রতত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে উঠার কারণে উপকূলের বন ধ্বংস হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তিনি বাজেট প্রণয়নের তুলনায় বাজেটের সঠিক ব্যয়ের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে নদী খনন ব্যবস্থার উপর জোর দেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম-আহ্বায়ক জনাব জাবেদ রাসিন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ রক্ষার পাশাপাশি বনায়নের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি নারী স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব দেওয়ার ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দাবি করেন।

গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীর সমস্যা সমাধান ছাড়া ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫% হচ্ছে শিশু, কিন্তু এরা জাতীয় বাজেটে নেই। সবশেষে তিনি পানি ব্যবস্থাপনা নীতি, নিরাপদ মাইগ্রেশন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন।

জনাব সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম তার বক্তব্যে অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণয়নের কথা তুলে ধরেন। জনাব কাউসার রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের অভিযোজন সক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। রফিকুল আলম বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় সাধন করতে হবে। ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ-এর ইকবাল ফারুক বলেন, গতানুগতিক বরাদ্দ নয়, চাহিদাভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। এম. এ. হাসান বলেন, দুর্যোগ সহনশীল কংক্রিটের টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে গতানুগতিক বরাদ্দের বাইরে পৃথক (১০০০০-১২০০০ কোটি টাকা) বরাদ্দ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকারের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।

Share this news