Published :
Updated :
জার্মানিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করা বিশিষ্ট কবি, লেখক ও কলামিস্ট দাউদ হায়দার আর নেই। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে বার্লিনের একটি বৃদ্ধাশ্রমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
তার ছোট ভাই, কবি জাহিদ হায়দার, সংবাদমাধ্যমকে জানান—বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকে দাউদ হায়দার মৃত্যুবরণ করেন।
দাউদ হায়দার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাবনা জেলায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ভুবনে তার পথচলা শুরু হয় খুব অল্প বয়সেই। তিনি সত্তরের দশকের শুরুতে দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য পাতার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে লন্ডনের ‘সোসাইটি ফর পোয়েট্রি’ তার একটি কবিতাকে এশিয়ার সেরা কবিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তবে ১৯৭৪ সালে তার লেখা একটি কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত হলে দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এরপর শুরু হয় ব্যাপক প্রতিবাদ ও আন্দোলন।
১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, পরে ২০ মে সন্ধ্যায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরদিনই বিশেষ নিরাপত্তায়, একটি ফাঁকা বিমানে, তাকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারত সরকারও পরে তাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করে।
এরপর কবি দাউদ হায়দারের জীবন ছুটে চলে নির্বাসনের পথ ধরে। অবশেষে ১৯৮৭ সালে জার্মান সাহিত্যের নোবেলজয়ী লেখক গুন্টার গ্রাসের আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
চিরকুমার এই কবি জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বার্লিনে নিজের বাসার সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এরপর তাকে হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় তার শেষ যাত্রার সময়গণনা।
দাউদ হায়দার ছিলেন প্রতিবাদী, স্পষ্টভাষী এবং নিজের বিশ্বাসে অটল এক কবি। তার জীবন যেমন ছিল বিপন্ন ও সংগ্রামী, তেমনি তার সাহিত্যকর্মও সাহসী ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রথার বিরুদ্ধে এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল।