অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে অবস্থান পরিষ্কার করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
Published :
Updated :
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ‘অর্থপাচার ও অবৈধ লবিং’-এর অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছেন ফেসবুক পোস্টে।
তিনি লিখেছেন, “কোটি কোটি টাকার চেয়েও দেশের স্বার্থ আর সম্মান অনেক বড়।”
“যারা শুধু গুজব ছড়িয়ে ফায়দা তুলতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”— ফেসবুক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা মাহফুজ।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে লেখা এ পোস্টে তিনি লেখেন, “আজকাল অনেক মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে সক্রিয়। নতুন একটি রাজনৈতিক দলের কিছু প্রভাবশালী এতে জড়িত। সবকিছু সামনে আসবে। কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছে না—এটা কেউ মেনে নিতে পারে?”
তিনি আরও লেখেন, “গত ১২ মাসে যারা আমাকে নানা অভিযোগে দোষারোপ করেছে, তারাও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ আনেনি। কিন্তু নতুন দলের কিছু নেতা এখন অস্বস্তিতে ভুগছে।”
পরবর্তীতে, সকাল ৪টা ২৮ মিনিটে তিনি পোস্টটি পরিবর্তন করে “নতুন একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী” অংশটি বদলে “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী” করে দেন।
পোস্ট সম্পাদনার ব্যাখ্যায় তিনি লেখেন, “কিছু মানুষ অপ্রয়োজনে কয়েকটি বাক্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে বলে আমি পোস্টটি সম্পাদনা করেছি। জুলাই মাস অনেকের জন্য রাজনৈতিক পদোন্নতির সিঁড়ি হয়ে উঠেছে। শুধু একটি দল নয়, বিভিন্ন দলের প্রভাবশালীরা আমার বা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফাহমিদুল হক কমেন্টে লেখেন, “নতুন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা...জাতি গভীর সংকটে।”
সাবেক ঢাবি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল বাকী লেখেন, “নতুন দল বলতে কারা? এখন তো দুইটা দল নিয়ে আলোচনা হয়—এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) আর ইউপি-বাংলাদেশ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ)। ভাইয়ের বিরুদ্ধে তো কেউ এমন কথা বলে না, আর বলা উচিতও না। আপনি কি ইউপি-বাংলাদেশের কারো কথা বলছেন?”
উত্তরে মাহফুজ লেখেন, “জুলাই সমর্থকদের অনেকের মধ্যেই দুর্নীতি দেখছি বলে একটি গোষ্ঠীর কথা বলেছি। তবে এনসিপি ছাড়াও আরও অনেকে আছে। নতুন দল বা প্ল্যাটফর্মগুলোতে শুধু এনসিপি নয়, আরও অনেকে রয়েছে। কিন্তু দোষ শুধু এনসিপির ঘাড়েই চাপানো হচ্ছে। ”
সংবাদমাধ্যম উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে “প্রভাবশালী” বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, জানতে চাইলেও তিনি ফোন ধরেননি কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তার উত্তর দেননি।
এদিকে এই বিতর্কের সূচনা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বনি আমিনের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে।
তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিভিন্ন লবিং ও ফাইলিং কমিশন থেকে পাওয়া টাকা গত ৯ মাস ধরে তার বড় ভাইয়ের অস্ট্রেলিয়ান অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছিল। এর মধ্যে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আনলে ওই অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও দাবি করেন, বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন। তবে সোমবার রাতে এইউএসটিআরএসি-এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি, অস্ট্রেলিয়ান কোনো সংবাদমাধ্যমেও এমন খবর ছিল না।
তবে উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির ফেসবুকে সোমবার রাতেই একটি পোস্ট দিয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
একটি ব্যাংক একাউন্টের লেনদেনের তথ্য প্রকাশ করে তিনি লেখেন, “বনি আমিন নামে একজন ব্যক্তি এবং কিছু সংবাদমাধ্যম যে তথ্য ছড়াচ্ছে, তা মিথ্যা। আমি অস্ট্রেলিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। এই একাউন্টটি ২০২৩ সাল থেকে খোলা।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে আমি কোনো লবিং করিনি। সে কাউকে করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা ছাড়া আমাদের পরিবারের অন্য কোনো আর্থিক লেনদেন নেই।”
মাহির আরও লেখেন, “আমার বাবা, আমি ও মাহফুজ বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাগুলো পরিচালনা করি। এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। সবকিছুই বাংলাদেশের আইনে অনুমোদিত এবং উন্মুক্ত তথ্য।”
তিনি বলেন, “বনি আমিনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি অস্ট্রেলিয়ার কিছু আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবো।”
এদিকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে ভাইয়ের পোস্টটি শেয়ার করে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
তিনি লেখেন, “যেহেতু লবিং নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি একটি ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন লোককে আমার ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে বলে, আমরা যদি তাকে বিটিভির একটি টেন্ডার পাইয়ে দিতে পারি, তাহলে তারা কমিশন দেবে এবং জুলাই বিদ্রোহ নিয়ে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান আয়োজনেও সাহায্য করবে। আমি বিষয়টি শুনে তৎক্ষণাৎ না করি। দেশের স্বার্থের সঙ্গে আপস নয়, ভালো উদ্দেশ্য হলেও।”