Bangla
8 days ago

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ

সরকার চাইলেই আর কর অব্যাহতি দিতে পারবে না, কর ব্যবস্থায় বড় বাধা দুনীর্তি: এনবিআর চেয়ারম্যান

Published :

Updated :

রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন সঠিকভাবে না হলে কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান।

তিনি বলেন, "বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই কর প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হচ্ছে। যে পরিমাণ কর আদায় হয় তার চেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেয়া হয়। আমরা কর আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সরকার চাইলেই আর কর অব্যাহতি দিতে পারবে না।"

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, "জাতীয় স্বার্থে শুধুমাত্র সংসদ অর্থ বিলের মাধ্যমে কর অব্যাহতির বিষয় বিবেচনা করতে পারবে। আমদানি—রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা আমাদের সমন্বিত ব্যর্থতা। বর্তমান যুগে পণ্যের দাম পৃথিবীর কোন প্রান্তে কত তা বোতাম টিপলেই জানা যায়। ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকগুলো এবং কাস্টমস এই বিষয়টি পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। যদি প্রকৃত মূল্যে পণ্য আমদানি—রপ্তানি করা না হয়, তাহলে কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রকৃত করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কর ব্যবস্থায় বড় বাধা দুর্নীতি। জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। বাংলাদেশে কোন কর শিক্ষা নেই। কেবল উচ্চ শিক্ষায় দু'একটি বিষয়ে কর শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত আছে। কর শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে কর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।"

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) এফডিসিতে কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, "এনবিআর বিলুপ্ত করে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা এই দুইভাগে বিভক্ত করা নিয়ে যে প্রতিবাদ হচ্ছিল আন্দোলনকারীরা তা বন্ধ করে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। তবে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা—কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি থাকলে সরকার সেটা বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এনবিআরকে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা দুভাগে বিভক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে। তবে এই সংস্কারের ফলে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বেড়ে রাজস্ব ক্যাডারের সুযোগ কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এনবিআরের সংস্কারের ফলে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তারা যদি তাদের পদন্নতি পদমর্যাদা প্রাপ্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে এই খাতের সংস্কারে বৈষম্য তৈরি হবে। আয়কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এনবিআরের সদস্য হয়ে থাকে। মেম্বাররা প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা। অর্থাৎ সচিব পদমর্যাদার।"

তিনি আরও বলেন, "রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা ভাবছেন এনবিআর দুই ভাগে বিভক্ত হলে তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। একই সাথে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়বে। তাই রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা দূরীকরণে এনবিআর বিভক্ত হলে প্রস্তাবিত বিভাগদ্বয়ের অর্গানোগ্রাম কেমন হবে তার ধারণা দেয়া উচিত। তবে রাজস্ব প্রশাসনে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক ভয় বিভাগীয় কার্যক্রমে হতাশা তৈরি করতে পারে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্বপালনে অনীহা ও আত্মবিশ্বাসহীনতা বাড়বে। ফলে কর আদায় ব্যহত হয়ে রাজস্ব আহরণ কমতে পারে। তবে কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুর্নীতি ও অন্যায্যতা বহাল রেখে রাজস্ব আহরণে ভালো ফল দেয়না। যা আমাদের কর ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান। সাধারণ করদাতা থেকে আরম্ভ করে উচ্চ করদাতা পর্যন্ত বেশিরভাগই কর আহরণকারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক সাধারণ করদাতাও অডিটের নামে হয়রানির মুখোমুখী হয়। কর ফাইল অডিটের নামে কর কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে থাকে। আয়কর ফাইল অডিট নিয়ে বেশ বড় একটা বাণিজ্য হয়। কর কর্মকর্তা ছাড়াও কিছু পেশকার, কম্পিউটার অপারেটর, কর বিভাগের ক্লার্ক লেভেলের কর্মচারী, কিছু কিছু আয়কর আইনজীবী করদাতাদের ফাইল অডিটে পড়ার ভয় দেখিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের ফাঁদ তৈরি করে। করদাতারা ভয়ে সেই ফাঁদে পড়ে।"

রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র পক্ষ থেকে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়:
১) করজালের পরিধি বাড়িয়ে কর আহরণ পদ্ধতি সহজ, স্বচ্ছ ও উৎসাহব্যাঞ্জক করা। বর্তমান পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে কর ফাঁকির সুযোগ থাকায় কর ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ অটোমেশন করা।
২) কর ব্যবস্থাপনা সংস্কারকরণের লক্ষ্যে এনবিআরকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করা নিয়ে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আয়কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা দূরীকরণার্থে প্রস্তাবিত সংস্কার বিষয়ে সকলকে স্পষ্ট ধারণা দেয়া।
৩) সংস্কারের ফলে আয়কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উচ্চতর পদে যেতে যাতে কোন বাধার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা।
৪) কেইস টু কেইস ভিত্তিতে কর অব্যাহতির সুযোগ বন্ধ করা।
৫) আন্ডার ইনভয়েসিং মাধ্যমে শুল্কফাঁকি বন্ধে রিয়েল প্রাইসে আমদানি করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬) করভীতি দূর করে কর বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।
এবং ৭) করের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের সঠিক ব্যবহার করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মাধ্যমেই প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব” শীর্ষক ছায়া সংসদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক আবুল কাশেম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। 

Share this news